
বিশ্বজুড়ে চলা করোনা ভাইরাসের তান্ডবের মধ্যে কোন সিনেমার শ্যুটিং করা এতদিন এককথায় ছিল মিশন ইমপসিবল। কিন্তু সেই ছবিটাই যদি হয় খোদ ‘মিশন ইমপসিবল’ সিরিজের, তাহলে তো অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাতেই হয়। আর তার জন্য বিশ্বখ্যাত এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটির নির্মাতারা এমন কিছু করলেন, যা এককথায় অভাবনীয়।
কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের আগে পুরোদমেই চলছিল ‘মিশন ইমপসিবল’ সিরিজের সপ্তম ছবির নির্মাণকাজ। তবে করোনার হানায় হঠাৎই সব থামিয়ে দিতে হয়। করোনার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে ছবিটির শ্যুটিং। তবে সংক্রমণে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে শ্যুটিং সরিয়ে নিতে হয়েছে সুদূর নরওয়েতে।
আর সেখানেই রয়েছে চমক। করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে যেসব ছবির নির্মাণকাজ আবার শুরু হয়েছে, সেগুলোর নির্মাতাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনেই শুরু করতে হয়েছে শ্যুটিং। ‘মিশন ইমপসিবল’-ও তার ব্যতিক্রম নয়। সংক্রমণ ঠেকাতে এর নির্মাতারাও নিয়ম মেনে আর সবকিছু তো করেছেনই, সেই সাথে নিয়েছেন তাক লাগানো বাড়তি এক পদক্ষেপ।
ছবিটির পুরো টিমের কোন সদস্য যাতে কোনভাবেই করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে ভাড়া করা হয়েছে আস্ত দু’টি বিলাসবহুল ক্রজ শিপ। স্থলভাগ থেকে দূরে নোঙর করা জাহাজ দু’টিতে কেবল ‘মিশন ইমপসিবল ৭’ এর শ্যুটিংই চলছেনা, এগুলোতে স্থায়ীভাবে থাকতেও শুরু করেছেন ছবির প্রধান তারকা টম ক্রজসহ শিল্পী, কলাকুশলীদের প্রত্যেকেই।
প্রকান্ড এই জাহাজ দু’টোর ভাড়া বাবদ ছবির প্রযোজকরা কত খরচ করেছেন জানতে চান? প্রতিমাসে ৫৯১,৫৪৫ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ কোটি টাকা!… সত্যিই, ছবিটি মিশন ইমপসিবল সিরিজের!
ক্রজ শিপ দু’টো হার্টিগ্রুটেন সংস্থার মালিকানাধীন। এগুলোর নাম ‘এমএস ভেসটেরালিন’ ও ‘এমএস ফ্রিডটিজফ ন্যানসেন’। আগস্টের শেষে ভাড়া করা জাহাজ দু’টো মিশন ইমপসিবল টিম ব্যবহার করবে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ, অর্থাৎ পুরো একমাস।
হলিউডের অন্যতম সফল মহাতারকা ট্রম ক্রজ অভিনীত ‘মিশন ইমপসিবল’ সিরিজের এর আগের ছয়টি ছবির প্রত্যেকটিই ছিল সুপারহিট। তারই ধারাবাহিকতায় সিরিজের সপ্তম ছবির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল এবছরের জুলাইয়ে লন্ডনে। তবে হঠাৎ হানা দেওয়া করোনার জেরে দীর্ঘ পাঁচ মাস বন্ধ রাখতে হয় এর শ্যুটিং। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করলে হলিউডেও আবার শোনা যেতে থাকে ‘লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন’ এর সেই অতি পরিচিত হাঁক। শ্যুটিং আবার শুরু করতে শুরু করে নির্মাতা সংস্থাগুলো।
সেই তালিকায় মিশন ইমপসিবল যোগ দিলেও এর নির্মাতারা করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে নূন্যতম ঝুঁকিও নিতে রাজি ছিলেননা। তারা সিদ্ধান্ত নেন এমন কোথাও শ্যুটিং করার যেখান থেকে বেরোতে পারবেনা ভেতরের কেউ, ঢুকতে পারবেনা বাইরের কেউ। সেইমতই ভাড়া করা হয় এই আস্ত দু’টো ক্রজ শিপ। শ্যুটিং শুরু হয় সমুদ্রের বুকে জাহাজে ভেসে। এমনকি থাকা-খাওয়াও সেখানে। বাইরের জগতের কোন সংস্পর্শ নেই, ফলে ভেতরের সকলেই সম্পূর্ণ নিরাপদ কোভিড-১৯ থেকে।
তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, শ্যুটিংয়ের জন্য আর সব দেশ ছেড়ে নরওয়েতেই বা যাওয়া কেন! এর উত্তর হল, নরওয়ের প্রচলিত কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থাগুলোকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য ছবি সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককেই নরওয়েতে পৌঁছানোর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দু’দফায় করোনা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া শ্যুটিং চলাকালীন প্রতিদিন স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ অন্যান্য নিরাপত্তা প্রোটোকল কঠোরভাবে মেনে চলতে হয় শিল্পী ও কলাকুশলীদেরকে।
‘মিশন ইমপসিবল ৭’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে ২০২১ সালের নভেম্বরে।